এখনো অনেক কিছু করার বাকি,ভবিষ্যতে সিনেমা পরিচালনা করার ইচ্ছা রয়েছে।সিনেমা জগতে পথ চলা শুরু। তারপরে নাটক, সিরিয়াল এবং তারপর সিনেমার মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু।এইসব নানান ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অভিনেতা প্রদীপ খাঁড়া । একান্ত সাক্ষাৎকারে সংবাদ টুডের প্রতিনিধি আয়ুষ রায় ও উজ্জ্বল সরকার ।
প্রঃ ‘কাল’ সিনেমার মধ্য দিয়েই আপনার প্রথম পথ চলা শুরু হয়েছিল, এই পথ কতটা মসৃণ ছিল?
উঃ ছবি দিয়ে কিন্তু অ্যাকচুয়াল আমার শুরু নয় , প্রথম সিনেমা ” কাল”। আমার প্রথম কাজ হচ্ছে “নাগর দোলা” সিরিয়াল পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্য, উনি আমাকে প্রথমে সুযোগ দেন। একটি ওয়ার্কসপ হচ্ছিল এবং তিনি আমাকে ওয়ার্কসপে একটি সাবজেক্ট দেন সেই সাবজেক্ট এর উপরে অভিনয় করতে হবে । আমরা তখন ১০-১২ জন ছিলাম। আমরা সবাই কাজটি করছিলাম। করার পরে উনি আমাকে বললেন একটি সিরিয়ালে কাজ করবেন। আমি বললাম হ্যাঁ, না করার কি আছে ? প্রথম কাজই হচ্ছে আমার অরিন্দম ভট্টাচার্য পরিচালিত “নাগর দোলা” সিরিয়াল। এরপর দূরদর্শনের দ-ুএকটা সিরিয়াল আমি করি। তারপরে সিরিয়াল করতে করতে কিন্তু প্রথম ছবি “কাল”, তারপর “বন্ধু”। অঙ্কুশের সাথে ছবি করেছি কিন্তু এখনো সেই ছবি বের হয়নি। এখন সিনেমা সিরিয়াল ওয়েব সিরিজ এসে গেছে।
প্রঃ ২০১০ সালে “দুই পৃথিবী”, ২০১১ তে “শত্রু ” সিনেমা কতটা সফলতা এনেছিল ?
উঃ “শত্রু ” আমার জীবনে বিশাল একটা সাফল্য এনেছিল। খুব ভালো দর্শক নিয়েছে। এখনো বিভিন্ন জায়গায় গেলে শত্রুর কথা লোকে জানতে চায় বা বলে। রাজ চক্রবর্তীর আরো একটি পরিচালনায় কাজ করেছিলাম সেটা হচ্ছে “প্রলয়”।”সানন্দা” চ্যানেলে ছিল এক মাসের একটি গল্প। ত্রিশটা বিষয় ছিলো ওটাতে ভীষণ। এছাড়া আমাকে সাফল্য যদি বলেন, যীশু দাসগুপ্তর “তিথির অতিথি”, “সোনার হরিণ” এবং সব থেকে বেশি সাফল্য আমাকে দিয়েছে সরফরাজ দার লেখা “বাজা বাজা” সিরিয়াল। ইন্দ্রনীল সেনের একটা নাটক ছিল ওটাতে। বহু বছর আগে হলেও লোকে আমাকে সেভাবে মনে রেখেছে, “নারকেল নাড়ু” বলে একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি।
প্রঃ অভিনয় জগতে আসা কিভাবে ?
উঃ এটা একটা হঠাৎ ব্যাপার। কি রকম একচুয়াল আমি বডি বিল্ডার ছিলাম। ব্যায়াম করতাম। অভিনয় করব এরকম কোনোদিন ভাবিনি। আমাদের পাড়াতে স্পোর্টস হচ্ছিল, সেখানে আমার বন্ধুরা আমাকে বলল তুই মেয়ে সাজ, আমি ছেলে মানুষই করতে করতে সাজলাম। আমি ফার্স্ট হয়েছিলাম। দর্শক বলল খুব ভালো হয়েছে। ভালো হওয়াটা শুনতে শুনতে আমি নাটক শুরু করলাম। নাটকের সব থেকে বেশি যার অবদান সে হল আমার বন্ধু রঞ্জিত। জানিনা কেন এলো না ? রঞ্জিত তারপরে সৌমিক, সুকুমার বলে একটি বন্ধু করে, পাপ্পু বলে একটি ছেলে করে, অনেকে করেছে। এমনকি একটি দল তৈরি করেছিলাম সুতাল নাম দিয়ে। নাচ – নাটক সবই হতো। বিভিন্ন জায়গায় রোমাঞ্চ করতাম বিভিন্ন রকমের লোক এসে নাটকটা দেখত। তারপর সেটা হলো, সেটাই হচ্ছে। রঞ্জিত বলে বন্ধুটি পার্থপ্রতিম বলে বিশিষ্ট পরিচালকের বাড়িতে নিয়ে যায়, একদিকে তো বিখ্যাত মানুষ এতবড় পরিচালক আমি তো অবাক হই। রানা পরিচয় করিয়ে দেয়। কিন্তু তখন কাজ করতেন না। কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন । আমাকে উনি বললেন তুমি অভিনয় করো। এটা বলার পেছনে কারণ আছে , সেটা হচ্ছে আমি ওনাকে নেমন্তন্ন করে এলাম, আমাদের নাটক দেখার জন্য পার্থদা এসেছিলেন নাটক দেখলেন এবং বললেন তুমি নাটক করো তোমার অভিনয় হবে। তারপর থেকে আর মাত্র এক দুই বছর বেঁচেছিলেন। তারপর চলে গেলে তখন রানা বলল যে দেখ পার্থদা এত বড় একটা মানুষ এনার জন্য কিছু করা যায়।
প্রঃ অভিনয় ছাড়া আপনার কি কোন পেশা রয়েছে ?
উঃ সেই অর্থে কিছুই নেই। আমার কাছে অভিনয় সব । সব থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে আমার বাড়ির ভীষণ সাপোর্ট আছে। আমার বাবা এখনো পর্যন্ত সকালে সাড়ে ৫ টার আগে ডেকে তুলে দেন, মা এখনো গরম জল করে দেয় স্নানের জন্য। আমার বাবা-মার সাপোর্ট ছাড়া অসম্ভব ছিল। এই অনুপ্রেরণার জন্য আমি আজ এই জায়গায়।
প্রঃ সিনেমার থেকে মেগা সিরিয়াল এর চাহিদা বেশি বাড়ছে দিন দিন, যেমন ”কবির” ও “আমাজন অভিযান” সিনেমা হলে দর্শক নিচ্ছে ….
উঃ কারণটা হচ্ছে এটাই যে অন্য কিছু না, সিরিয়ালের গল্প গুলোর টেপ পাওয়া যাচ্ছে। এটা একচুয়াল মেনলি ফাইল গত ঘটনা সিরিয়াল হচ্ছে। কিছু ঘটনা কিছু জিনিস কখনো তো আমার পরিবারের সঙ্গে ঘটেছে তবেই তো গল্পটা সৃষ্টি হয় এবং সেখানে টানা দেখতে পায়। মানুষ আগের মতন আর নেই রবিবার ছুটির দিনে দল বেঁধে সিনেমা দেখতে যাবে। সেটা কিন্তু আর নেই ।অর্থাৎ ঘরে বসে সিনেমা দেখতে পাচ্ছে ।
প্রঃ শত্রু সিনেমার মাঝখানে আপনার যে দৃশ্য রয়েছে …
উঃ প্রথম শ্যুটিংটা হয়েছিল বোলপুরে । সেখানে প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল । মজার ব্যাপার হচ্ছে , সেখানে সবাই শুটিং দেখতে এসেছিল। আমার কাস্টউম ছিল সাদা প্যান্ট আর জামা ছিল সাদার মধ্যে লাল । আমার প্রথম শর্ট কেটে গেছে। দ্বিতীয় শর্ট গাড়ী থেকে নামা। নামতে গিয়ে প্যান্টটা ফেটে গেল। তারপর আর একটা বিষয় হচ্ছে প্রথম সর্টে আমার অরজিনাল লুক ছিল । তারপর দ্বিতীয় শটের সময় প্যান্টটা যখন আবার ফেটে যায় তখন সবাই হেসে উঠেছে । চেঞ্জ করে যখন আবার শর্ট দিই তখন আবার ফেটে যায় । সেদিন আবার হাঁট ছিল । হাটের মাঝখানে এরকম একটা ব্যাপার । সব মিলিয়ে একটা মজার ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল। বোলপুরে অনেকগুলো কাজ করেছি । শত্রু সিনেমা করতে করতে বুঝেছিলাম দর্শক ভালোভাবে নেবে । সিনেমাতে এই সিন গুলি দেখে আনন্দ পেয়েছে। সৌমিক চট্টোপাধ্যায়ের আরো একটা সিনেমা করেছি । সৌমিক চট্টোপাধ্যায়ের “চিরদিনই তুমি যে আমার – টু” ওটাতে খরাজ দার ছেলে ছিল , বেনুদার ছেলে ছিল সুপ্রিয় দা ।
প্রঃ ভবিষ্যতে সিনেমা পরিচালনা করার ইচ্ছে রয়েছে কি ?
উঃ চিন্তা ভাবনা থাকলে হয় না , সবটাই টাকার ব্যাপার রয়েছে । একটা শর্ট ফিল্ম করেছি। এই শর্ট ফ্লিম দিয়ে পথ চলা শুরু ।এটা একটা সমুদ্রের ব্যাপার ছবি করারটা । সবই ইচ্ছে আছে । কিন্তু এখনই সম্ভব নয় , আরো অনেক ফ্লিম করার ভাবনা রয়েছে ।
প্রঃ বর্তমানে আপনি কি কাজ করেন ?
উঃ এই মুহুর্তে সিরিয়াল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করছি । জি বাংলায় “ত্রিনয়নী” , “রানী রাসমনি’তে কাজ করেছি । কখনো কখনো ছোট বড় পার্ট এসে যায় সিরিয়ালের । লাস্ট ছবি “ টেকো ” করলাম । ওয়েব সিরিজ “ ব্যোমকেশ বক্সী ” করেছি । ২০১৪ সালে সন্দীপ রায়ের চার সিনেমাটি করেছি । সৃজিত মুখার্জীর “এক যে ছিল রাজা ” , কৌশিক গাঙ্গুলির “ ধূমকেতু ” , অনির্বান মুখার্জীর “ ব্যোমকেশ বক্সী ” এটা আমার দ্বিতীয় কাজ সুনয়ন অয়ন এবং সুরিন্দর তিনজনের পরিচালনা প্রশান্ত সহযোগিতা গোপাল , মৌ , জয়ত্রী এবং জয়ত্রীর বাবার সহযোগিতায় মিনতি খাঁড়া সহযোগিতায় দুটি শর্ট ফ্লিম তৈরি হয় দর্শকদের দেখানোর জন্য । পরবর্তী কালে আরো কিছু করার ইচ্ছে আছে সেটা সময় বলবে ।
প্রঃ প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জীর সাথে কাজের সুযোগ আসলে কি করবেন ?
উঃ হ্যাঁ অবশ্যই কাজ করব কারণ ওদের সাথে কাজ করা মানে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা।
প্রঃ রঞ্জিত মল্লিক ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা …
উঃ রঞ্জিত মল্লিকের সাথে কাজ করা হয়নি , যদি সুযোগ আসে তবে আগে কাজ করব। বর্তমানে কাজ করছি অনির্বাণের সাথে দুটো ছবিতে কাজ করেছি , সৃজিত মুখার্জির ছবিতে কাজ করেছি। কাছের মানুষ এবং ভালো মানুষ সৌমিত্র চ্যাটার্জি।
প্রঃ সৌমিত্র চ্যাটার্জি এবং প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী দু’জনের কাজের পার্থক্য কোথায় ?
উঃ এইভাবে বলা মুশকিল। সৌমিত্র চ্যাটার্জির সাথে যখন কাজ করেছি তখন সাদা কালো ছবি ছিল সেই ছবি তো আর হবে না। এখনো সেই ছবিগুলো দর্শক দেখে। কারণ একটায় সেই ফরমেটটা কি একই ফরমেটে তৈরি হয়েছে , তুলনা করা একদমই ঠিক হবে না। কারণ বুম্বাদা তখন কমার্শিয়াল ছবি করতো , একচেটিয়া কমার্শিয়াল ছবি। তখন একটু ভাবনার ছবি , একটু মাল্টিপ্লেক্স ছবি হত না। এখন যে ধরনের ছবিগুলো হয় সৌমিত্র দা করেছেন তবে দুজনেই ভালো অভিনেতা।
প্রঃ আপনার পরিচালক এবং অভিনেতাদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ?
উঃ অনির্বান মুখার্জী , দেব , জিৎ , প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী , সৌমিত্র চ্যাটার্জী , রাহুল , ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত , নুসরাত , ইন্দ্রানী হালদার এদের সবার সাথে কাজ করে ভাল লাগছে । এখন অনেক নতুন নতুন পরিচালকের সাথে কাজ করছি, সবাই খুব ভালো কাজ করছেন। সিনিয়র জুনিয়র সবার সাথে কাজ করে ভালো লাগছে এবং অনেক অভিজ্ঞতা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বলা যায় এখন কাজের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, প্রোডাকশন হাউজ থেকে স্পষ্ট। বর্তমান সরকার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ইউনিটিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। স্টুডিও আর্টিস্ট ফোরাম ফেডারেশন গিলস সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছেন, আর্টিস্ট টেকনিক অনেক ভাবে উপকৃত হচ্ছেন আর্টিস্ট বন্ধু প্রশান্তর সহযোগিতায় হবে। বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের “কাগজের বউ”তে পাওলি দাম ও জয় সেনগুপ্ত এর সাথে কাজ করে ভালো লেগেছে। পরিচালক ভুমুক্তি ছবি ছত্রাকে কাজ করে অনেক অভিজ্ঞতা পেয়েছি । সৌমিক চ্যাটার্জির পরিচালনায় ওয়েব সিরিজ “হ্যালো টু” তে রিমা সেনের সাথে কাজ করেছি খুব ভালো অভিনেত্রী। জয় সেনগুপ্ত খুব ভালো অভিনেতা।
প্রঃ অভিনেতা হিসেবে আপনি কাকে পছন্দ করেন ?
উঃ আমার সবাইকে ভালো লাগে এখন যারা নতুন ভাবে কাজ করছে তাদেরকে । যেমন আমি খরাজ দার কথা বলব, সুপ্রিয় দত্ত আছেন, আরো অনেকে। আপশোস একটাই, রঞ্জিত দার সাথে এখনো কাজ করা হয়ে ওঠেনি। দেবের সাথে কাজ করেছি ,জিৎ দার সাথে কাজ করেছি। অঙ্কুশের সাথে একটি ছবি করেছি কিন্তু সেই ছবিটা এখনও রিলিজ হয়নি।